পরিফেরা (Porifera) যার সাধারণ নাম স্পঞ্জ হল এক জাতীয় বহুকোষী প্রাণী। ল্যাটিন শব্দ Porus অর্থ ছিদ্র এবং Ferre অর্থ বহন করা। এ শব্দ দুটির সমন্বয়ে পরিফেরা (Porifera) শব্দটি তৈরি হয়েছে। ১৮৩৬ সালে বিজ্ঞানী গ্রান্ট (Grant) প্রথম পরিফেরা (Porifera) পর্বটির নামকরণ করেন।
প্রাণিজগতের এই পর্বের (Phylum) প্রাণীরা সাধারণত স্পঞ্জ নামে পরিচিত। এরা সাধারণত সামুদ্রিক এবং অপ্রতিসম (Asymmetrical) প্রাণী। এরা আদিম বহুকোষী প্রাণী।
বৈশিষ্ট্য
- বহুকোষী দেহে সুনির্দিষ্ট কলা, কলাতন্ত্র, অঙ্গ এবং অঙ্গতন্ত্র অনুপস্থিত। স্নায়ু কলা গঠিত হয়নি।
- প্রধানত অসাম্য দেহ, অর্থাৎ দেহকে কোনো দিক থেকে সমানভাবে ভাগ করা যায় না।
- দেহে নালিকাতন্ত্র (Canal system) বর্তমানে যা এ পর্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
- দেহের অভ্যন্তরে কোয়ানোসাইট কোষ দ্বারা আবৃত স্পঞ্জোসিল (Spongocoel) নামক প্রশস্ত গহ্বর বর্তমান যা অসক্যুলাম (Osculum) নামক বড় আকারের ছিদ্রের মাধ্যমে বাহিরে উন্মুক্ত।
- দেহপ্রাচীর অস্টিয়া (Ostia) নামক অসংখ্য ক্ষুদ্রাকৃতির ছিদ্র বিশিষ্ট, এগুলি পোরোসাইট (porocyte) নামক কোষ দ্বারা নির্মিত।
- দেহে ফ্ল্যাজেলা বিশিষ্ট কোষ পিনাকোসাইট ষ্টিত এক বা একাধিক প্রকোষ্ঠ (Chamber) বর্তমান।
- এদের দেহ ফুলদানি আকৃতির (Vase-like), সিলিন্ডার আকৃতির (Cylindrical), নলাকার (Tubular), কুশন আকৃতির (Cushion-shaped) ইত্যাদি এবং প্রতিসাম্যতা (Symmetry) অপ্রতিসম (Asymmetry) অথবা অরিয় প্রতিসম (Radial symmetry) ধরনের।
- দেহপ্রাচীর দ্বিস্তর বিশিষ্ট। বাহিরের স্তর পিনাকোডার্ম (Pinacoderm) এবং ভেতরের স্তর কোয়ানোডার্ম (Choanoderm)। উভর স্তরের মাঝে সাধারণত অকোষীয় (Non-cellular) মেসেনকাইম (Mesenchyme) ধাত্র বর্তমান যাতে স্পিকিউল (Spicule), স্পঞ্জিন (Spongin) ও অ্যামিবয়েড (Amoeboid) কোষ দেখতে পাওয়া যায়।
- পরিণত প্রাণীরা নিশ্চল (Sessile) অর্থাৎ কোন অবকাঠামোতে স্থায়ীভাবে আটকে থাকে।
- দেহে মুখছিদ্র বা পায়ুছিদ্র থাকে না।
- এরা একাকী (Solitary) অথবা উপনিবেশ (Colonial) গঠন করে অবস্থান করে।
- সকলেই জলজ প্রাণী যাদের বেশিরভাগ সামুদ্রিক সামান্য কিছু প্রজাতি স্বাদুজলের।
- সকল স্পঞ্জই উভলিঙ্গ (Hermaphrodite) হলেও এরা Allogamy তথা cross-fertilization প্রদর্শন করে অর্থাৎ একই দেহে স্ত্রী ও পুরুষ জননকোষ উৎপন্ন হলেও দুটি ভিন্ন সদস্যের স্ত্রী ও পুরুষ জননকোষের মাধ্যমে নিষেক (Fertilization) সম্পন্ন হয়।
- এদের অযৌন প্রজনন কোরক উৎপাদন বা বাডিং (Budding), দ্বিবিভাজন বা ফিশন (Fission) এবং গেমিউল গঠন (Gemmule formation) ধরনের এবং যৌন প্রজনন গ্যামেটোগনি (Gametogony) প্রকারের।
- এই সকল প্রাণীর পুনরুজ্জীবন ক্ষমতা প্রচুর। দেহের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের পুনঃ উৎপত্তির (Regeneration) ক্ষমতা বর্তমান।
- এরা আসিলোমেট বা সিলোমবিহীন প্রাণী।
সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ